নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আলোচিত ফুড বøগার মিথুন ও স্থানীয় একটি নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক জিসানসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে এ দুইজনের ছিলো উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা। তাই তাদের গ্রেফতার নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। এ মামলায় অন্তঃস্বত্ত¡া নারী, সাংবাদিকসহ ২৫২ জনকে আসামী করা হয়েছে।
রবিবার রাতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন মৃধা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। সোমবার দিবাগত রাতে নগরীর শহীদ নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফুড বøগার ও নারায়ণগঞ্জ টিভি’র সাবেক শহর প্রতিবেদক শওকত মিথুন (৩৬), তার চাচাতো ভাই প্রেস নারায়ণগঞ্জ নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান (২১) ও জিসানের বাবা মোহাম্মদ হানিফ (৫০) কে গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ। জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান প্রথম আলো পত্রিকার পাঠক সংগঠন ‘বন্ধুসভা’র নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। কিশোর ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো’তেও কন্ট্রিবিউটর হিসেবে জিসান লেখালেখি করে বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।
গ্রেপ্তার শওকত মিথুন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তিনি ‘নারায়ণগঞ্জ টিভি’তে প্রতিবেদক হিসেবে সাংবাদিকতাও করেছেন। জুলাই আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনে করা তার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, দশওকত মিথুন গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আন্দোলনের সপক্ষে বøগ তৈরী করে। যেগুলি এখনো ফেসবুকে রয়েছে। সেই মিথুনকে গ্রেফতার দুঃখজনক।’ মামলায় মিথুনের অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকেও আসামি করা হয়েছে।
মিথুনের বড়ভাই শাহাদাত হোসেন মামুন বলেন, “ঘটনার রাতে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ ফিরছিল মিথুন। অনেক রাতে সে বাড়িতে ফেরে। ঘটনার সময় সে ছিলই না। ”
জুলাই আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে নেতৃত্বে দেওয়া ছাত্রনেতা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের জেলা কমিটির সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা জানান, দসাংবাদিক জিসান জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আন্দোলনের সময় পায়ে আঘাতপ্রাপ্তও হন জিসান।’
জিসানের চাচা হাবিবুর রহমান বলেন, “অভিযানের রাতে জিসান বা তার বাবা ওই এলাকাতে (দেওভোগ) যায়নি। আমাদের বাসা থেকে দেওভোগ তো কয়েক কিলোমিটার দূরে।”
এছাড়া, পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর পদবি উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।
এই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার সমর্থকরা বাধা প্রদান করে এবং সড়কে ট্রাক দিয়ে বালি ফেলে ও বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে রাতভর পুলিশকেও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দিকে নেবার পথে বঙ্গবন্ধু সড়কের কালিরবাজার মোড়ে আইভীর সমর্থক, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা সৃষ্টি করে। পরে তারা আইভীকে বহনকারী পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। এতে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।
গত ৮ মে রাতে আইভীকে গ্রেপ্তার করতে নগরীর দেওভোগে তার পৈতৃক বাড়ি ‘চুনকা কুটিরে’ গেলে তার সমর্থক ও স্থানীয় এলাকাবাসী বাধা দেন। আইভীও ‘রাতের আঁধারে’ কোথাও যাবেন না বলে জানান। পরে সকালে গ্রেফতার করে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) তাসমিন আক্তার বলেন, “সাবেক মেয়রকে গ্রেপ্তারে গেলে পুলিশ বাধার সম্মুখীন হন। তাকে গ্রেপ্তারের অভিযানে বাধা দেওয়ার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার সময়ের সাক্ষ্য-প্রমাণ, ইন্টেলিজেন্স তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে আসামিদের শনাক্ত করে মামলায় এজাহারভুক্ত করা হয়েছে”।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী বলেন, “আমরা ৫ আগস্টের আগে এই ধরনের ঘটনা দেখতাম। তখন অজ্ঞাত মামলায়ও মানুষকে গ্রেপ্তার করা হতো। এইখানে যদি বাবা আওয়ামী লীগ করে থাকে, তাহলেও তো তার দোষে তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যেতে পারে না পুলিশ। যে অন্যায়কারী তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এই ধরনের প্র্যাকটিস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কেননা আইনে বলা আছে, একজন নিরপরাধও যেন হয়রানি না হয়।”
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...