নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘স্বৈরাচার’ আখ্যা দিয়ে তার ওপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট’-এর সিনিয়র ফেলো মাইকেল রুবিন। ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘ফার্স্টপোস্ট’-এ প্রকাশিত এক মতামতধর্মী নিবন্ধে তিনি এই আহ্বান জানান।
“কেন ট্রাম্পের বাইডেনের ব্যর্থ বাংলাদেশ কৌশল দ্বিগুণ করা উচিত নয়” শিরোনামের এই নিবন্ধটি ২০২৫ সালের একটি ভবিষ্যত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের পর ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং পরবর্তীতে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা ও বিদেশি শক্তির ইঙ্গিত
মাইকেল রুবিন তার নিবন্ধে দাবি করেছেন, জো বাইডেন প্রশাসন ড. ইউনূসের ক্ষমতা গ্রহণকে “গণতান্ত্রিক পরিবর্তন” বলে স্বাগত জানিয়ে একটি “ব্যর্থ নীতি” গ্রহণ করেছিল। তার মতে, ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনকে আপাতদৃষ্টিতে স্বতঃস্ফূর্ত মনে হলেও এর পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ISI) এবং কাতার ও তুরস্কের অর্থায়ন থাকতে পারে, যা বাইডেন প্রশাসন অনুধাবন করতে পারেনি।
ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
নিবন্ধে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন কাল্পনিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। রুবিনের মতে:
স্বৈরাচার ও প্রতিশোধ: ইউনূস সংস্কারের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন এবং স্বৈরশাসন কায়েম করেছেন।
দমন-পীড়ন: তিনি ধর্মনিরপেক্ষ নেতা, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের জন্য কারাগার ব্যবহার করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন বানোয়াট মামলা দিচ্ছেন।
উগ্রপন্থীদের মুক্তি: কারাগার থেকে ইসলামপন্থী ও সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে, যা মানবাধিকারের অজুহাতে মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের জন্য জায়গা খালি করার কৌশল।
সংখ্যালঘু নির্যাতন: ইউনূসের সমর্থকরা বাংলাদেশের হিন্দু ও খ্রিস্টানদের মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে।
নোবেল পুরস্কারের অপব্যবহার: রুবিন অভিযোগ করেন, ড. ইউনূস তার নোবেল শান্তি পুরস্কারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ঘৃণা ও প্রতিশোধের রাজনীতি করছেন।
সম্ভাব্য ট্রাম্প প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ
মাইকেল রুবিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসন একই ভুল করতে পারে। তাই তিনি ট্রাম্প এবং তার সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে ড. ইউনূসের বিষয়ে কঠোর হওয়ার জন্য কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন:
১. অভ্যুত্থান হিসেবে স্বীকৃতি: বাংলাদেশের ক্ষমতা পরিবর্তনকে একটি “ধীর গতির অভ্যুত্থান” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
২. ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা: বিরোধী নেতা ও সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠানোর অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
৩. ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ: বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের “ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ তালিকায়” অন্তর্ভুক্ত করা।
৪. জামায়াতকে সন্ত্রাসী ঘোষণা: ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’কে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা।
৫. শেখ হাসিনাকে স্বীকৃতি: একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনাকেই বাংলাদেশের বৈধ নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
নিবন্ধের শেষে রুবিন সতর্ক করে বলেন, এই পদক্ষেপগুলো নিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ দ্রুত “অসহিষ্ণুতা ও ইসলামি উগ্রপন্থার আঁতুড়ঘরে” পরিণত হবে, যার পরিণতি হবে ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনির প্রতি জিমি কার্টারের সরল বিশ্বাসের মতোই মারাত্মক।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...