নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় নয়ন হত্যাকাণ্ডে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ও তার মেয়ে সুমনা নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাতের আদালতে তারা এ জবানবন্দি দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলা কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান জানান, হত্যার দায় স্বীকার করে সাবিনা ও তার দুই মেয়ে সুমনা বিস্তারিতভাবে হত্যাকাণ্ডের মূল ঘটনা, জড়িতদের নাম এবং লাশ গুমের চেষ্টার বর্ণনা দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, নিহত নয়ন তিন বছর কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান রাসেল ওরফে ঠোঙা রাসেল।
তারা একসাথে ইয়াবা সেবন করতেন।
নয়ন কারাগার থেকে বেরিয়ে বিষয়টি জানতে পারলে দাম্পত্য কলহ চরমে ওঠে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর সকালে নয়নের সঙ্গে এ নিয়ে তুমুল ঝগড়ার একপর্যায়ে সাবিনাকে মারধর করে মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেন নয়ন। এর আগে সাবিনা অন্য একটি মোবাইল দিয়ে রাসেলকে বাসায় আসতে বলেন। নয়ন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গেটের সামনে রাসেলের সঙ্গে মুখোমুখি হন।
তখন দু’জনের মধ্যে ঝগড়া বাধে। এরপর রাসেল ও সাবিনা নয়নকে টেনে ফ্ল্যাটের ভিতরে নিয়ে যায়।
রুমের ভেতরে কালো হাতলযুক্ত স্টিলের লাঠি দিয়ে নয়নের মাথায় একাধিক আঘাত করে অচেতন করে ফেলা হয়। এরপর সুইচ গিয়ার ও ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়।
হত্যার সময় সাবিনার প্রথম স্বামীর ঘরের দুই মেয়ে সুমনা ও সানজিদা পাশের রুমে ছিল।
পরে সাবিনা বড় মেয়ে সুমনাকে নানির বাসায় ও ছোট মেয়ে সানজিদাকে পরিচিতজনের বাসায় রেখে আসে। রাতে সাবিনা ও রাসেল ফের বাসায় ফিরে যায়।
পরদিন সন্ধ্যায় রাসেল তার পরিচিত চয়নকে ঘটনাটি খুলে বলে। চয়ন লাশ গুমের আশ্বাস দেয়।
তারা দোকান থেকে হ্যাকসো ব্লেড, কস্টেপ ও ইয়াবা কিনে বাসায় ফিরে আসে।
এরপর সাবিনা, রাসেল ও চয়ন তিনজনই লাশের পাশে বসে ইয়াবা সেবন করে। পরে হ্যাকসো ব্লেড দিয়ে নয়নের পা দুটি বিচ্ছিন্ন করে শরীরের অংশ ড্রামে ভরে এবং পা দুটি প্লাস্টিক ও কস্টেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় তোষকের ভেতরে লুকিয়ে রাখে।
লাশ ফেলার জন্য তারা সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন জালকুড়ি এলাকা থেকে একটি অটোরিকশা ভাড়া করে দক্ষিণ শিয়াচর মাওয়া মার্কেটের পেছনের ঝোপে ড্রামটি ফেলে আসে। পরে চয়ন সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ ড্রামভর্তি লাশটি উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে নিহতের পরিচয় শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনসহ জড়িত সাতজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ফতুল্লা থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, ভয়ঙ্কর এ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। গ্রেফতার বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...