আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগীরাই কি নারায়ণগঞ্জের বিএনপির ভবিষ্যৎ
বিগত ১৭ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, নির্যাতন-নিপীড়ন, মামলা-হুলিয়ার মধ্যেও বিএনপির নীতি-আদর্শ আঁকড়ে ধরে রাজপথে থেকেছেন নারায়ণগঞ্জের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ আর তারেক রহমানের নির্দেশনাকে বুকে ধারণ করে জীবন বাজি রেখে তারা সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছেন, শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। অথচ আজ সেই ত্যাগী নেতাদের ওপরই বহিষ্কারের তলোয়ার তোলার অপচেষ্টা চলছে—এ অভিযোগ উঠেছে নব্য বিএনপি সাজা আওয়ামী লীগ–সুবিধাভোগী মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে ‘মডেল মাসুদ’ এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
দীর্ঘ সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে পৃষ্ঠপোষকতা এবং অর্থ সহায়তার অভিযোগ রয়েছে মডেল মাসুদের বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে একসময় ‘আওয়ামী লীগের ডোনার’ বলেও উল্লেখ করা হতো। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর রাতারাতি রং পাল্টে বিএনপির সদস্যপদ অর্জন করেন তিনি। গোপন তথ্য অনুযায়ী, কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে সদস্যপদ লাভ ও পরবর্তীতে মনোনয়ন নিশ্চিত করা, এই তথ্যও ত্যাগী নেতাদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবুল ইউসুফ খান টিপু, তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম, জনপ্রিয় কাউন্সিলর আবুল কালাম আশা, নির্যাতিত নেতা আবু জাফর আহমেদ বাবুলসহ অসংখ্য নেতাকর্মী বছরের পর বছর মামলা-হামলা-গুম-নির্যাতনের মধ্যেও বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছেন।
এমনকি কুখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রভাব বিস্তারের সময়ও নারায়ণগঞ্জের মিশন পাড়াকে দখলমুক্ত রেখেছিল বাবুল ও তার পরিবারসহ বিএনপির নিবেদিত কর্মীরা। তাদের ত্যাগ, চাপ, নির্যাতন বিএনপিকে নারায়ণগঞ্জে শক্ত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে এটা সর্বজনবিদিত।
কিন্তু অভিযোগ, এই ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধেই আজ অপপ্রচার, বহিষ্কারের তালিকা তৈরির পেছনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে মডেল মাসুদ গোষ্ঠী।
মডেল মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কিছু নামধারী গৃহপালিত সাংবাদিক ও ফেসবুক কনটেন্ট ক্রিয়েটরের মাধ্যমে নিজের সুনাম প্রচারে তিনি ব্যস্ত। মূলধারার সাংবাদিকদের পাশ কাটিয়ে হলুদ সাংবাদিকতার মাধ্যমে নিজের কৃতিত্ব জাহিরের চেষ্টা করছেন। কিন্তু যখন মূলধারার সাংবাদিকরা অতীতের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন, তখন মাসুদের অনুসারীরা তাদেরকেই ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা করার ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছে, এসব অভিযোগও ভেসে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
মাসুদের ঘনিষ্ঠদের দাবি, তিনি নাকি অতীতে গোপনে বিএনপিকে সহযোগিতা দিতেন। “মডেল মাসুদ গোপনে বিএনপিকে সাহায্য করতো” এই গল্পে হাসছে নারায়ণগঞ্জ। তিনি বিএনপিকে বিভিন্ন সময় সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন বিগত দিনে বিএনপির পরীক্ষিত নেতাদের দিয়েছেন এমন কোন প্রমাণ মাসুদ দেখাতে পারেনি। বরং প্রশ্ন উঠেছে,
গডফাদারদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা, ছবি, একই মঞ্চে বসা, এসব কি কাকতালীয়?
আওয়ামী লীগ কি বিনা লাভে তাকে এত গুরুত্ব দিত?
আওয়ামী লীগের গডফাদারদের মঞ্চে একসাথে বসেছিল কি বিএনপির নেতা?
আওয়ামী প্রকল্পের অর্থদাতা হয়েও কি মাসুদ ‘গোপনে বিএনপি’?
সুবিধাভোগী হয়েও কি ‘গোপনে বিএনপি’?
এটা কি ব্যঙ্গ, নাকি রাজনৈতিক কমেডি?
এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে মাসুদের গডফাদারদের সঙ্গে তোলা ছবিগুলো কি ক্যানভাসিং? নাকি সাজানো নাটক? নারায়ণগঞ্জে তো বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আরও অনেকে বড় বড় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক আছে। তারাতো নীতি আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে নি, তারাতো নিজে, নিজের পরিবার ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতির স্বীকার হয়েছেন, তারাতো আওয়ামী লীগের পা চাটা কুত্তা সেজে সুযোগ সুবিধা আদায় করেনি তবে কোন স্বার্থ আদায় করতে মাসুদ আওয়ামী লীগের গডফাদারদের পা চেটে চলতো, এমন প্রশ্ন আজ মুখে মুখে।
অনেক নেতাকর্মীর অভিযোগ, “দীর্ঘ দিনের সংগ্রাম, জেল-জুলুম, পরিবারের ওপর হামলা, সন্তানদের গুমের ভয়, এসব সহ্য করে যারা বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছে, আজ তাদেরকেই হেয়প্রতিপন্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য বিএনপি সাজা মাসুদ গোষ্ঠী।”
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির তৃণমূল এখন প্রশ্ন তুলছে, ত্যাগীরা কি তাহলে আজ উপেক্ষিত, আর আওয়ামী লীগ–সুবিধাভোগীরাই কি বিএনপির ভবিষ্যৎ?”
নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন একটাই প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে,
“যে ব্যক্তি জীবনের অর্ধেকটা সময় আওয়ামী লীগের ছায়ায় কাটিয়েছেন, যিনি আওয়ামী সভা-সমাবেশের খরচ যোগান দিতেন, যাকে গডফাদাররা নিজেদের পাশে বসিয়ে সম্মান দিতেন, তিনিই কি আজ বিএনপির ত্যাগীদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন?
তৃণমূল নেতাদের প্রশ্ন, “বিএনপি কি ত্যাগীর দল, নাকি টাকার জোরে কেনা নতুন অতিথিদের কব্জায় চলে যাচ্ছে?”
এ প্রশ্নে উত্তাল নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখন উত্তর চায়।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...