নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিএনপির উদ্যোগে সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে এক জোরালো বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ত্যাগী রাজনীতিবিদ জাহিদ হাসান রোজেল। বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সন্ত্রাস, ছিনতাই ও মাদকের ভয়াবহতা। প্রশ্ন হলো, এরা কারা? তারা কোনো ভিনগ্রহের মানুষ নয়। এরা আমাদের চারপাশের পরিচিত মানুষ—আমার ভাই, বন্ধু বা সহকর্মী। এই সমাজকে কলুষমুক্ত করতে হলে আমাদের প্রত্যেককে দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু প্রশাসনের দিকে চেয়ে থাকলে চলবে না।”
তিনি বলেন, “আমরা যদি নিজেরা সচেতন হই, এবং সম্মিলিতভাবে মাদক বিক্রেতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম—আমাদের সন্তানরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। একটি নিরাপদ ও সুনাগরিক সমাজ গঠনের জন্য প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ববোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
জাহিদ হাসান রোজেল বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ছিল। আজকের সরকার ক্ষমতার অপব্যবহারে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে। শেখ হাসিনার সরকার পুলিশকে জনগণের বন্ধু বানানোর পরিবর্তে তাদেরকে ভয়ংকর এক দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছে। মানুষ এখন পুলিশকে ভয় পায়, সম্মান করে না। কারণ এই সরকার তাদের দিয়ে মানুষকে দমন-পীড়ন করে, গুলি চালিয়ে পঙ্গু করে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “ শেখ হাসিনা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন, গণতন্ত্রকে হরণ করেছেন। এই রাষ্ট্র জনগণের—এটা কোনো দলের নয়। যেই সরকারে থাকুক না কেন, রাষ্ট্রের সুশাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার।”
তিনি বক্তব্যে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ এক দিনের ফসল নয়। আমরা এই দেশ পেয়েছি ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে রণাঙ্গনে জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন। সেই দেশকে আজ মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ ও লুটেরা চক্রের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের প্রত্যেককে সাহসের সঙ্গে সাদাকে সাদা, আর কালোকে কালো বলতে শিখতে হবে।”
তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলেন, “আজকে দেশের তরুণ সমাজ বিপথে যাচ্ছে। তারা যদি সঠিক দিকনির্দেশনা পায়, তাহলে দেশ বদলে দিতে পারে। তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের সবাইকে মিলে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ আমরা শহীদের জাতি, আমাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যায় না।”
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এবং বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনগণ। বক্তারা ফতুল্লাসহ পুরো নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মাদকের বিস্তার ও প্রশাসনের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং একতাবদ্ধ হয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ার ঘোষণা দেন।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয় যা এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে দেশব্যাপী শান্তি, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নেতারা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...