বগুড়ার শেরপুর উপজেলা, যা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ ও জমিদার অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত, সম্প্রতি এই শহর অচেনা আর রহস্যময় ব্যক্তিদের আনাগোনায় উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। পৌর শহর থেকে গ্রামীণ জনপদ পর্যন্ত তাদের উপস্থিতি স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ, শঙ্কা এবং নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, তবু অনেকে পরিস্থিতিকে সম্ভাব্য বিপদের পূর্বাভাস হিসেবে দেখছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দিনরাত বিভিন্ন বয়সী অচেনা মুখকে মোটরবাইকে ও রিকশায় ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। বিকাল বাজারের একজন চায়ের দোকানদার বলেন, “গত কিছুদিন ধরে সন্ধ্যার পর কিছু অপরিচিত যুবককে আমার দোকানের আশেপাশে মোটরবাইকে ঘুরতে দেখছি। তারা নিজেদের মধ্যে নিচু স্বরে কথা বলে এবং আচমকা এসেই দ্রুত চলে যায়। তাদের আচরণ খুবই সন্দেহজনক।”
শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সিএনজিচালক আশরাফ আলী জানান, “আমি ভবানীপুর, রানীর হাট ও চান্দাইকোনা রোডে সিএনজি চালাই। প্রায়ই অনেক অচেনা যাত্রী ওঠেন, যারা গ্রামের নির্জন এলাকায় নেমে যান। যদিও সরাসরি সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি।”
অটোরিকশা চালকরা বলেন, তারা প্রায়ই অচেনা যাত্রী পেয়ে থাকেন, তবে বেশিরভাগের সঙ্গে একজন স্থানীয় লোক থাকে। অটোরিকশা চালক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, “গত সপ্তাহে গভীর রাতে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাক্স ও ব্যাগসহ দুই নারী ও দুই পুরুষকে দুটি রিকশায় উপশহরে নামিয়ে দিয়েছি। তাদের আগে কখনো শেরপুরে দেখিনি, পুরো বিষয়টি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে।” অন্য অটোরিকশা চালক দুলাল বলেন, “ইদানীং বিকেল হলেই বাসস্ট্যান্ড ও বাজারে নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে, যারা বিভিন্ন আবাসিক এলাকার সামনে নেমে যাচ্ছে।”
শাহআলী নামের আরও একজন রাত্রিকালীন অটোরিকশা চালক জানান, “বেশিরভাগ অচেনা যাত্রীরা বাসস্ট্যান্ড ও ধুনট মোড় থেকে ওঠেন। তাদের আঞ্চলিক ভাষা শুনে বোঝা যায়, তারা শেরপুরের বাইরের লোক।”
এই ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শেরপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মুস্তাফিধ নাসিম বলেন, “বহিরাগত লোক থাকলে প্রশাসনের নজরদারি থাকা উচিত। যদি তারা কোনো অপকর্ম করে, তার দায় স্থানীয়দের উপর পড়বে। শেরপুরে অচেনা লোকের উপস্থিতি কাম্য নয়।”
শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা জানে আলম খোকা উল্লেখ করেন, “সম্প্রতি শেরুয়া বটতলা এলাকা থেকে আলাদীন নামে এক ছেলেকে হাত-পা বেঁধে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এটি ইঙ্গিত করতে পারে যে কেউ শেরপুরের শান্ত পরিবেশ অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে।” তিনি এলাকাবাসীকে অনুরোধ করেছেন, আত্মীয়-স্বজন ব্যতীত কোনো অচেনা ব্যক্তিকে আশ্রয় না দিতে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে।
শেরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, “অপরিচিত মুখের আনাগোনা আমি নিজ চোখে না দেখলেও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অবগত হয়েছি। থানা পুলিশকে নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলব। আমাদের সকল দল-মত নির্বিশেষে সজাগ থাকতে হবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে কোনো অপশক্তি শেরপুরের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে না পারে।”
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন জানান, “বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত না হোক, তবে কোনো সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লে সাথে সাথে পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করছি। আমরা শেরপুরে নাশকতা মোকাবেলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...