সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বগুড়ায় অবাধে চলছে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। মামলা-জরিমানা করেও থামছে না পলিথিন চক্রের হোতারা। কাঁচা টাকা হাতিয়ে নিতে পরিবেশ নষ্ট করে পলিথিন চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে আছে। জেলায় ২০টিরও অধিক কারখানায় চলছে পলিথিন উৎপাদন আর বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে। সরকারিভাবে অভিযান পরিচালনা করলেও এসব পলিথিন ব্যবসায়ী আইনের তোয়াক্কা না করে তাদের কারখানায় পলিথিন উৎপাদন চালু রেখেছেন।
জানা যায়, বগুড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অবৈধ পলিথিন কারখানা। কারখানাগুলোতে দিন-রাত উৎপাদন হচ্ছে পলিথিন। এসব পলিথিন বগুড়াসহ অন্যান্য জেলাতেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পলিথিন উৎপাদনে লাইসেন্স দেয়া হয় না। অথচ সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে তারা অবৈধভাবে পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাত করে যাচ্ছে। এদিকে সবজি বাজার থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই ব্যবহৃত হচ্ছে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যাগ। বিক্রেতারা বলছেন, খুচরা পণ্য বিক্রিতে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তারা বাধ্য হয়েই পলিথিনে পণ্য দিচ্ছেন।
রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে বগুড়ার রাজা বাজার, ফতেহ্ আলী মাছের বাজার এবং শহরের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে অবাধে চলছে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা কারও কাছে নেই পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ। বিকল্প ব্যাগের মধ্যে বেড়েছে সিমেন্টের বস্তা থেকে বানানো প্লাস্টিকের ব্যাগ, প্লাস্টিক জাতীয় নেট ও পলিপ্রোপিলিনের টিস্যু ব্যাগের ব্যবহার।
অন্যদিকে শহরের মুড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুড়ি পণ্যটি পলিথিন ছাড়া বিক্রির উপায় নেই। যেসব দোকানি নিয়ম মানছেন তারা বিকল্প ব্যাগ দিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা।
ফতেহ্ আলী কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ক্রেতারা সঙ্গে করে ব্যাগ নিয়ে আসেন না। তাই স্বল্প মূল্যের পণ্যের সঙ্গে আমাদের পলিথিনের ব্যাগ দিতে হয়। আবার না দিলে তারা আমাদের কাছ থেকে পণ্য কেনেন না।
বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সঞ্জিব দাস বলেন, পলিথিন পরিবেশের জন্য খারাপ তা আমরাও জানি কিন্তু আমরা নিরুপায়। ১০০ টাকার মাছ কিনলে তার সঙ্গে ১০ টাকার ব্যাগ কেউ নিতে চায় না। আবার আগে যেখানে ১০০ টাকার পলিথিনে আমাদের সারাদিনে চলে যেতো, সেখানে ৬০০ টাকার ব্যাগ কিনলেও হয় না। সরকারের কাছে দাবি জানাই, বিকল্প ব্যাগগুলো যেন পলিথিনের দামেই আমরা কিনতে পারি।
মুড়ি বিক্রেতা কৌশিক চন্দ্র বলেন, ফতেহ্ আলী একটি পুরাতন বাজার। আমরা আইন মানলে মুড়ি বিক্রি বন্ধ রাখতে হবে। মুড়ি বিক্রিতে পলিথিন ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। মুড়ি পণ্যটি বাতাস লাগলেই নষ্ট হয়ে যায়। শুনেছি পাটের পলিথিন আবিষ্কার হয়েছে। সরকারের কাছে, পলিথিনের মতো বিকল্প ব্যাগ যাতে আমরা পাই।
বাজার করতে এসেছেন শেফালি বেগম। সঙ্গে ব্যাগও নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, বাজারে পলিথিন নিষিদ্ধ তাই আমি বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি আমার মতো কেউই ব্যাগ নিয়ে আসেননি। সবার হাতেই পলিথিনের ব্যাগ। আবার অনেক মুদিদোকানে ব্যাগ ছাড়া গেলে ১০০ টাকার পণ্যের জন্যও ১০ টাকার ব্যাগ কিনতে হয়। কেউ আবার পলিথিনের টিস্যু ব্যাগ ব্যবহার করছে। আমার জানামতে যেটাও নিষিদ্ধ।
বগুড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মাহথীর বিন মোহাম্মদ জানান, সরকারিভাবে পলিথিন নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬৭২ কেজি অবৈধ পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ৬৭ হাজার টাকা জরিমানাসহ ৪টির অধিক মামলা হয়েছে। এরমধ্যে রাজা বাজারের জি এন্টারপ্রাইজে ১৪ শ’কেজি পলিথিন জব্দ এবং নিষিদ্ধ পলিথিন মজুদ রাখার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া বগুড়া বিসিকে রাশেদুর রহমান রাশেদের মালিকানাধীন কারখানায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি খুব দ্রুতই বাজারে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারবো। নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন, মজুদ ও বিপণনের বিরুদ্ধে পরিবেশ দপ্তরের অভিযান চলবে।
মিন্টু ইসলাম বগুড়া প্রতিনিধি:
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...