বন্দরে ওসমানদের দোসররা প্রকাশ্য, বিএনপির শেল্টারসহ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের সাত মাস অতিবাহিত হলেও বন্দরে ওসমানদের দোসররা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাদেরকে আগের মতই অনেকটা প্রভাব খাটাতেও দেখা যাচ্ছে। এলাকায় ড্রেজার ব্যবসা থেকে শুরু করে এখনও নিয়মিত চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে। ওসমান পরিবারের দোসরা রং ধনুর মত ভোল্ট পাল্টাতে সময় নেয় না। যারা ১৬ বছর আগে চাল আনতে পান্তা ফুরানোর উপক্রম হতো। তারাই বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। টাকার প্রভাব ও নিজেদের পল্টিতে প্রকাশ্য দিবালোকেও ঘুরছে কিভাবে? এমন সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর প্রশাসন ডেভিল হান্ট অভিযান শুরু করে। মঙ্গলবার রাতে নাসিক ২৩ নং ওর্য়াডস্থ কবরস্থান রোড( সল্পের চক) এলাকা হতে বিএনপির নেতা কবির ওরফে গরু কবিরের বাড়ি থেকে থেকে কাজী জহিরকে গ্রেফতার করে । সাবেক কদম রসুল পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী জহির। বর্তমানে দেশের এমন প্রেক্ষাপটে কাজী জহির বিচার বাণিজ্য, অন্যের জমি দখল, বিশাল দাপটে ছিল। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি অভিযোগও হয়েছিল। দেশের আলোচিত এক নেতা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের রাজনীতির অনুসারী কবির ওরফে গরু কবির। কবিরের বাড়িতে জমি সংক্রান্ত বিচারে আসলে কাজী জহিরকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বন্দর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। বিচার শালিস হতে কাজী জহিরকে গ্রেফতারের বিষয়টি সবচেয়ে আলোচিত। কাজী জহির ওসমান পরিবারের একজন বিশস্ব গোয়েন্দা। শামীম ওসমানেে শীপের ব্যবসার উৎসাহদাতা কাজী জহির। এক সময়ের বেশ দাপটে প্রভাবশালী শামীম ওসমানের শীপ ক্রয় করে দেয়, পরে আরো ২ টি মোট ৩ শীপ ক্রয় করে দেয়। কাজী জহিরকে জিঙ্গাসাবাদ করলে শামীম ওসমানের অনেক গোপন তথ্য বের হয়ে আসবে বলে সুশীল মহলের দাবী।
জাহাঙ্গীর আলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টি সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এমন একটা সময় গেছে রিক্সা ভাড়া দিতে কষ্ট হত। সেই জাহাঙ্গীর আলম বর্তমানে বিশাল অর্থশালী বনে গেছেন। নিজ এলাকা ছাড়াও মদনপুর ফুলহর এলাকায় তার শ্বশুর রহিম মিয়ার এলাকায় ডুপ্লেক্স ৫ তলা বিলাশ বহুল ভবন আছে, এছাড়া নিজ এলাকা রসুলবাগ, কলেজ মাঠ, মাঠপাড়া ৫ তলা ভবন, আমিন আবাসিক এলাকায় সাড়ে ৭ শতাংশ,৷ ৫ কাটা, কল্যান্দী এলাকায় ১শ শতাংশ জমি, খাদেম পাড়া ২ টি প্লট, কাইতাখালী নিতাই বাবুর ২৬ শতাংশ জায়গা ব্যাংক হতে ক্রয় ্করে, সোনাচড়া মন্দির সংলগ্ম ৩০৷ শতাংশ, মুছাপুর ইউনিয়নের প্রেমতল এলাকায় বিল্লাল মিয়ার ৩৩ শতাংশ, কুশিয়ারা হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ভেন্ডার রাজা মিয়ার ৮০ শতাংশ জমি তার স্ত্রী শিউলী বেগমের নামে। এছাড়া নামে বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তির মালিক। সহ বিভিন্ন এলাকায় আরো ১০/১৫ টি প্লট রয়েছে। ব্যাক্তিগত কোন ব্যবসা-বাণিজ্য না থাকলেও আকিজ কোম্পানি ঘিরে সুবিধা ভোগীদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম একজন। স্বৈরাচারী সরকার ও দলীয় প্রভাবে জিরো হতে হিরো হয়েছে। ওসমান পরিবারের দোসরদের মধ্যে জেলা জাতীয় পার্টি সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। আকিজ কোম্পানি ঘিরে অল্প দিনে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। জাহাঙ্গীর আলমের অর্থ সম্পদ কিভাবে, জেলায় দায়িত্ব রত গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম এক জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে বিষধ বিশ্লেষণ ও তদন্ত সাপেক্ষে বেড়িয়ে আসবে অনেক অজানা তথ্য।
চাঁন মিয়া একজন বহুরূপী বালু দস্যু সুবিধাভোগী। ৯০ দশকে মুন্সিরগঞ্জ হতে বন্দরে আসে। বন্দর খেয়াঘাটে লেভারদের সর্দার ছিলেন। তারসাথে তাল মিলিয়ে বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িয়ে পরে। ৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভোল্ট পাল্টায় চাঁন মিয়া। ফের ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পূর্বের রুপে। তারপর বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে ওসমান পরিবারের একনিষ্ট ভক্ত ও কাছের লোক চাঁন মিয়া। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আগেও চারদলীয়জোট সরকার আমলে বালুর ব্যবসা ছিল বেশ। তারপর ১/১১ সময়ে সুকৌশলে ব্যবসা চালিয়ে যায়। মহাজোট সরকার স্বৈরনীতির সরকারের আমলে এমন কোন কাজ নেই যে তারা করেনি। ওসমান পরিবারের একজন দোসর।
গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী নামটি শুনলেই আতকে উঠে সাধারণ মানুষ। একজন লজিং মাস্টার গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী এখন শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
খন্দকার হাতেম হুসাইন বন্দর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন যাবত। স্বৈরচারী সরকারের সময়ে পদের অধিকারী হয়ে জিরো হতে হিরো কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
উজ্জ্বল হোসেন, ওসমান পরিবারের দোসর হলেও ভোল্ট পাল্টানো এক নেতা উজ্জল আহমেদ। বন্দর ১ নং ওর্য়াড আওয়ামী লীগ নেতা উজ্জল আহমেদ বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আবার সময়ের প্রেক্ষাপটে অনেকটা কৌশলে অগ্রসর হচ্ছেন উজ্জ্বল আহমেদ।
ওসমান পরিবারের দোসরদের গ্রেফতার দাবী সচেতন মহলের।
জনতার ক্ষমতার মসনদ থেকে কাঠগড়ায় আ’লীগ
জাপা নেতারা প্রকাশ্য, স্বৈরাচারী সরকারের সর্ব্বোচ সুবিধাভোগীরা!!
ক্ষমতার মসনদ থেকে কাঠগড়ায় আওয়ামীলীগ ও জনবিচ্ছন্ন একটি সংগঠনে রুপ নিয়েছে। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে বিদায় নিয়ে ২০২৪ সাল শেষে ২৫ সালের মার্চ মাস। বছরটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য সবসময় স্মরণীয় একটি বছর হয়ে থাকবে। কারণ এর আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কখনো এমন ভয়াবহ বিপর্যয় দেখতে হয়নি। চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বছর শুরু হলেও শেষ সময়ে এসে রক্ষা পায়নি দেশের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলটি। মাত্র ৭ মাসের মাথায় শোচনীয় পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে দলটিকে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে পালিয়ে গেলে সারাদেশের মতোন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের করুণ পরিণতি ঘটে। একদিকে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর একচেটিয়া শাসনের পর হঠাৎ ছন্দপতন আরেকদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার শহীদদের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামি হয়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বর্তমান অবস্থা খুবই শোচনীয়। গ্রেফতার এড়াতে নেতাকর্মীরা বর্তমানে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অর্থাৎ গত ৫ আগস্টের পর থেকেই এলাকা ছাড়া রয়েছেন তারা। দিন যতোই যাচ্ছে নেতাকর্মীদের নিজ এলাকায় ফেরা নিয়ে সংশয় বেড়েই চলেছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থা তারা বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়া করে রাখলেও তাদেরও যে একই দশা হবে তা কখনোই আঁচ করতে পারেননি। তাদের একচেটিয়া আধিপত্য কর্মীদের অবমূল্যায়ন দল ও সংগঠনের কথা চিন্তা না করে নিজেদের মনগড়া ও পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করছিল। প্রতিটি ওর্য়াড, থানা, উপজেলা এলাকার হাতে গনা ১০/১৫ জন নেতা আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। সংগঠনের ভিত্ত একেবারে নজিরবিহীন অবজ্ঞা করে তুলে। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারা ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এখন তারা জনশত্রুতে পরিণত হয়েছেন। দাঁড়িয়েছেন আসামির কাঠগড়ায়। অর্থাৎ বছরের শুরুটা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে থাকলেও বছরের শেষ সময়টা তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঘটনায় জেলার বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত প্রায় ৫/৬ শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। এইসব মামলায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। গত ৫ই আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খারাপ থাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একেবারে ধরাছোঁয়ার বাহিরে ছিলেন। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হচ্ছেন। যা নিয়ে প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছেই। এদিকে গত তিন মাসে কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী পরিবার নিয়ে দেশত্যাগ করতে পারলেও অধিকাংশ নেতাকর্মী এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকেই আবারও দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। এছাড়া অনেক স্থানে আবার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনা ঘটছে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বর্তমানে খারাপ সময় পার করছেন। গ্রেফতার থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এভাবে কতদিন পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকতে হবে তা এই মুহূর্তে বলা অসম্ভব বিষয়। দিনের পর দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতো কঠোর হবেন ততোই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার হওয়ার শঙ্কা বাড়বে। সারাদেশের মতোন নারায়ণগঞ্জেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক কার্যালয় লুটপাট করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের জন্মস্থান বলা হয়ে থাকে নারায়ণগঞ্জকে। দেশের যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। পাশাপাশি ঢাকায় আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হলে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিকে আলাদা নজর থাকতো সবার। নিজ জেলায় তারা বর্তমানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও দেশত্যাগের পর থেকেই সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতির মোড় ঘুরে গেছে। যেখানে কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বড় বড় কথা বলতেন নিজেদের জানান দিতে ব্যস্ত থাকতেন সেখানে তারা একেবারেই আড়াল হয়ে গেছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করলেও সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। অথচ কয়দিন আগেও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বড় বড় হুংকার দিয়েছেন। দলীয় যে কোনো কর্মসূচিতে নিজেদের বিভিন্নভাবে জানান দেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতেন। সেই সাথে দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে সুবিধাভোগী হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সংকটকালিন সময়ে আর তাদের দেখা মিলছে না।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...