নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নতুন স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় আশিক নামে এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। দেশীয় অস্ত্রের কোপে তার হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনায় আহত আশিকের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ রিদয় সোমবার (১৮ আগস্ট) রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় ইমন-রায়হান গংদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সোমবার বিকেলে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে আশিকের সঙ্গে রামারবাগ এলাকার শহীদের ছেলে ইমন ও তার সহযোগী রায়হান, জয়, মিঠু, দুলাল, শহীদ, ছোটন, চুন্নু, সাগর, ভাঙ্গারি শুভ, সুমনসহ আরও কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আশিক ও তার সঙ্গীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় ইমন আশিককে হত্যার উদ্দেশ্যে রামদা দিয়ে কোপ দিলে তার বাম কব্জির কাছে গুরুতর জখম হয়। একইভাবে রায়হান আশিকের সঙ্গী মেহেদীর মাথায় কোপ মারলে তিনি পিঠে গুরুতর আহত হন। এছাড়া রাব্বিকে ডান পায়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে প্রতিপক্ষ।
এ ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার পর সোমবার রাতেই অভিযান চালিয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ দুলাল ও আব্বাস আলী চুন্নু নামে দুইজনকে আটক করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আটককৃত আব্বাস আলী চুন্নু বর্তমানে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটির সদস্য হলেও এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর তিনি বিএনপি’র স্বেচ্ছাসেবক দলে যোগ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত চুন্নুকে ছাড়িয়ে নিতে মঙ্গলবার সকালে থানায় ছুটে যান ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদ। বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরেই ক্ষোভ ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে নাম আসা আব্বাস আলী চুন্নুকে গ্রেফতারের পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় সরব হয়ে ওঠেন ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদ। জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে তিনি বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে থানায় উপস্থিত হয়ে বিভিন্নভাবে তদবির ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। স্থানীয়দের মতে, একজন গুরুতর কুপিয়ে আহত করার মতো নৃশংস ঘটনার আসামিকে বাঁচাতে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন নেতার এমন তৎপরতা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে।
দলের ভেতরেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—যেখানে একজন আওয়ামী লীগপন্থী ব্যক্তি হঠাৎ করে বিএনপির ব্যানারে স্থান পেয়ে এখন গুরুতর অপরাধের আসামি হয়েছেন, সেখানে তার পক্ষে দাঁড়িয়ে কিভাবে দলের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব? নেতাকর্মীরা বলছেন, রাসেল মাহমুদের এমন অবস্থান শুধু সংগঠনকেই বিব্রত করেনি, বরং সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...